বাড়ি শিক্ষাব্যবস্থা শিক্ষিত বেকার নিয়ে কিছু কথা

শিক্ষিত বেকার নিয়ে কিছু কথা

বাংলাদেশের শিক্ষা
বাংলাদেশের শিক্ষা

শিক্ষা মানুষকে দেয় আলো এবং সম্মুখে চলার পথ। শিক্ষা যখন আলো দানের পরিবর্তে শিক্ষার্থীদের অন্ধকারে নিক্ষেপ করে তখন আমরা আসলে কাকে দায়ী করব? শিক্ষার্থীদের, না শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে, না অভিভাবকদের, না শিক্ষাব্যবস্থাকে না রাজনৈতিক নেতৃত্বকে? আসলে কমবেশী সবাই দায়ী।

ক্রমবর্ধমান বেকারত্বের দেশ আমাদের বাংলাদেশ। পরিস্থিতি যে কত ভয়াবহ তা বিভিন্ন পরিসংখ্যান এবং চিত্রের মাধ্যমে বুঝা যায়। আমরা যখনই কোনো নিয়োগ পরীক্ষায় পরীক্ষা নিতে যাই, তখন দেখা যায় শিক্ষিত বেকারদের কী করুণ হাল। হাজার হাজার নয়, লাখ লাখ শিক্ষিত বেকার ঘুরে বেরাচ্ছে চাকুরি নামক সোনার হরিণের পিছনে। এই হরিণ ধরার জন্য একশটি পদের বিপরীতে কয়েকশ কিংবা কয়েক হাজার প্রার্থী এসে হাজির হয়, সবাই উচ্চশিক্ষিত। দিনের পর দিন, মাসের পর মাস এবং বছরের পর বছর তারা হয় বাবা-মার উপর কিংবা টিউশনি বা এ ধরনের কিছু অস্থায়ী পেশার উপর নির্ভর করে চলছে। কোথায় তাদের ভবিষ্যত, কোথায় দেশকে কিছু দেয়ার চিন্তা আর কোথায় সুকুমার বৃত্তি কিংবা দেশ সেবার চিন্তা। শুধুই বেঁচে থাকার সংগ্রাম। এই চিন্তাই তাদের আচ্ছন্ন করে রাখে সর্বক্ষণ। তাদের চোখে মুখে ফুটে উঠে, যে দেশ তার নাগরিকদের তেমন কিছু দিতে পারে না, সে দেশের নাগারিকগণও সে দেশকে তেমন কিছু দিতে চায় না বা পারে না ।

ইন্টারভিউ নিতে গিয়ে দেখা যায়, অনেক প্রার্থী মৌখিক পরীক্ষার সব নিয়মকানুন জানা থাকা সত্ত্বেও কঠিন বাস্তবতা এবং জীবনের ঘাত-প্রতিঘাত তাদেরকে মৌখিক পরীক্ষার বোর্ডেই কেঁদে ফেলতে বাধ্য করেছে। কেউ এসেছে বোনের ভর্তির টাকা দিয়ে সুদুর উত্তরবঙ্গ থেকে ঢাকায় পরীক্ষা দিতে, কেই শয্যাগত পিতার চিকিৎসার টাকা যোগাতে পারছে না বরং সেই সংসারের উপরই নির্ভর করে তার শিক্ষিত জীবন চালাতে হচ্ছে, নেই বাবার জমি যা দিয়ে উপার্জন বাড়াতে পারে বা কিছু করে খেতে পারে।

এসব শিক্ষিত তরুণরা চাকুরীর পিছনে না ছূটে যদি নিজের গ্রামে ফিরে যায় এবং নিজেদের অল্প পুঁজি নিয়ে সমবায় সমিতি গঠন করে ছোটখাট ব্যবসা যেমন মাছের চাষ করা, হাঁস-মুরগীর ফার্ম করা, তরি-তরকারী ও উন্নত জাতের ফল চাষ, কৃষিকাজ উন্নত জাতের ধান উৎপাদন ইত্যাদি কাজে নিয়োজিত হতে পারে।

একদিকে আমাদের শহরগুলো আর অধিক জনসংখ্যার ভার বইতে পারছে না। সৃষ্টি হচ্ছে নতুন নতুন বস্তি। আর বস্তিতে সৃষ্টি হচ্ছে মাদক আর অসামাজিক কার্যকলাপের আখড়া। চরম স্বাস্থ্য হুমকির মতো পরিবেশ। কী দরকার শিক্ষিত তরুণদের ছোট মেসে থাকা, গুটিসুটি হয়ে এবং অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করা আর রাস্ট্রের উপর চাপ বাড়ানো। তারা নিজেরাই কর্মসংস্থান সৃস্টি করতে পারবে, উপকার করতে পারবে সাধারন মানুষের, নিজেরা কারো মুখাপেক্ষী হবে না। নির্ভরশীল হবে না সরকার কিংবা দেশের প্রতি।

দেশের প্রতিটি ছোট ছোট জেলা শহরগুলোর কলেজে এখন অনার্স পড়ার সুযোগ রয়েছে। ছাত্রছাত্রীরা অনার্স পড়ছে পাঁচ, ছয় কিংবা সাত বছর যাবত। তারপর মাস্টার্স করছে আরও এক দু-বছর ধরে। পুরো সময়টাই তারা কৃষক কিংবা স্বল্প আয়ের বাবা-মার স্বল্প উপার্জনের উপর নির্ভর করে পড়াশুনা করছে। বছরের পর বছর তারা মেসে থাকছে আর স্বপ্নের দিন গুনছে কবে নিজে উপার্জনক্ষম হবে, কবে বাবা-মা ভাইবোনদের উপকার করবে কবে নিজে বিয়েশাদি করে সুখের সংসার গড়বে। কিন্তু পাশ করার পর শুরু হয় আর এক বিড়ম্বনা। চাকুরির জন্য ছুটতে হয় দ্বারে দ্বারে আর অফিসে অফিসে। কিন্তু চাকুরি মিলছে না। হতাশা নিত্যসঙ্গী।

কলেজে পড়ার সময়ই সমবায়ের মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীরা বিভিন্ন কর্মমূলক ও উৎপাদনমুখী কিছু একটা করতে পারে। তারা রাজনৈতিক নেতাদের পেছনে না ছুটে এসব কাজে নিজেদের নিয়োজিত করতে পারলে দেশ জাতি এবং নিজের পরিবার উপকৃত হবে। জীবনে সাফল্য আসবে।

লেখক পরিচিতি

মাছুম বিল্লাহ বাংলাদেশে ইংলিশ টিচার্স অ্যাসেসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইট্যাব)-এর সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি পূর্বে ক্যাডেট কলেজ ও রাজউক কলেজের শিক্ষক হিসেবে কাজ করেছেন। কাজ করেছেন ব্র্যাকের শিক্ষা কর্মসূচিতে বিশেষজ্ঞ হিসেবে। তিনি ভাব বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর হিসেবেও কর্মরত রয়েছেন। তিনি নিয়মিত শিক্ষাবিষয়ে নানা প্রবন্ধ লিখছেন।

কোন মন্তব্য নেই

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Exit mobile version