বাড়ি উদ্যোগ

গণিত ফোরাম খুলনা: সম্ভাবনা ও প্রতিবন্ধকতা

গণিত ফোরাম গঠন গণিত শিখনে মানুষকে আগ্রহী করে তুলতে পারে। ছবিসূত্র: ইউটিউব
গণিত ফোরাম গঠন গণিত শিখনে মানুষকে আগ্রহী করে তুলতে পারে। ছবিসূত্র: ইউটিউব

কে এম রব্বানী লিখেছেন গণিত ফোরাম নিয়ে

বিজ্ঞান শিক্ষার দশা আমাদের দেশে কখনোই অনুকুল ছিল না। গণিত শিক্ষার দশা আরও খারাপ। বাংলা সাহিত্যে শিক্ষকরা খুব একটা জায়গা পাননি। তারপরেও দুই শ্রেণির শিক্ষক বাংলা সাহিত্যে জায়গা করে নিয়েছেন- পণ্ডিত স্যার, যিনি বাংলা সাহিত্য, ব্যাকরণ আর সংস্কৃত পড়াতেন আর গণিত শিক্ষক। পণ্ডিত স্যার কঠিন কঠিন সংস্কৃত শব্দ ব্যবহার করে কথা বলেন, টিকি রাখেন আর শিক্ষার্থীদের পড়তে দিয়ে টেবিলে ঘুমিয়ে পড়েন। অন্যদিকে, গণিত শিক্ষক একবারেই আলাদা। বড় বড় রক্তিম চোখ, কটমট করে তাকান, হাসতে শেখেন নাই, কারণে-অকারণে বেত খোঁজেন, শিক্ষার্থীরা ভয়ে তটস্থ থাকে, এমনকি অভিভাবকও। এ থেকেই বোঝা যায় গণিতে ভীতির কারণ। গণিত শিক্ষা কখনোই আনন্দদায়ক হয়ে ওঠেনি বলে গণিত বিসর্জনের প্রথম সুযোগই শিক্ষার্থীরা নিয়ে নিত। নবম শ্রেণিতে এসেই গণিত বিসর্জন। বর্তমানে অবস্থা আরও ভয়াবহ। চাকরির বাজারনির্ভর শিক্ষা অর্জনের কারণে জ্ঞানের অধিকাংশ মৌলিক বিষয় পড়তে শিক্ষার্থীরা আগ্রহ হারাচ্ছে। অন্যদিকে উচ্চশিক্ষার পাঠ্যক্রম বিস্তৃতি লাভ করার ফলে উচ্চশিক্ষা ক্রমাগত গণিতনির্ভর হচ্ছে। যুগের চাহিদার ফলে গাণিতিক বিশ্লেষণ ছাড়া এমনকি সামাজিক বিজ্ঞান অধ্যয়নও কঠিন হয়ে যাচ্ছে। স্কুল পর্যায়ে গণিত শিক্ষায় অনীহার কারণে উচ্চশিক্ষা নিতে বেগ পেতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।

বাংলাদেশ ফ্রিডম ফাউন্ডেশন (বিএফএফ) প্রকাশিত এক সমীক্ষায় দেখা যায়, ২০০০ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত আট বছরে বিজ্ঞান শিক্ষার্থীর কমার হার ৩১.৩৩ শতাংশ। ২০০৮ সালে মাধ্যমিক পর্যায়ে বিজ্ঞান শিক্ষার্থী ছিল ২৩.৭৬ শতাংশ। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের প্রতিবেদনেও প্রায় একই চিত্র প্রকাশিত হয়েছে। গ্রামের অবস্থা আরও ভয়াবহ। মাধ্যমিক পর্যায়ে শহরের বিজ্ঞান শিক্ষার্থীর হার ২৬ শতাংশ এবং গ্রামে ১৫ শতাংশ। উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে শহরে বিজ্ঞান শিক্ষার্থীর হার ২০ শতাংশ এবং গ্রামে ১০ শতাংশ।

উচ্চশিক্ষায় বিজ্ঞান, কারিগরি আর কৃষি শিক্ষায় সব মিলিয়ে মাত্র ১১ ভাগ শিক্ষার্থী আছে। বিজ্ঞান এবং গণিত শিক্ষার এ অবনতি লক্ষ্য করেই গণিত ফোরাম খুলনার জন্ম হয়। একটি বিজ্ঞান এবং গণিতমনষ্ক সমাজ নির্মাণে গণিত ফোরাম খুলনা ২০০৮ সাল থেকে কাজ করে যাচ্ছে।

আমরা লক্ষ্য করেছি, বিগত কয়েক বছর দেশের বিভিন্ন স্থানে ছাত্রদের নিয়ে অনুষ্ঠিত গণিত অলিম্পিয়াড শিশু-কিশোরদের ভেতর উৎসাহ সৃষ্টি করেছে। গণিত আতঙ্কও অনেকাংশে দূরীভূত হয়েছে। সাথে সাথে গণিতের প্রতি আগ্রহও জন্মেছে।

গণিত শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষার্থীদের আগ্রহী করে গড়ে তোলার জন্য আনন্দদায়ক শিক্ষা পদ্ধতি প্রণয়ন প্রয়োজন। পাঠ্যপুস্তকগুলোকে শিশুমনের উপযোগী করে প্রণয়ন করতে হবে। শুধু পণ্ডিতের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে গণিতকে শিক্ষাক্রম উপযোগী করে রচনা করা যাবে না বরং পাণ্ডিত্য দিয়ে শিশুর দৃষ্টিতেই শিক্ষাক্রমকে দেখতে হবে। তা হলেই গণিত শিক্ষার মানোন্নয়ন হবে বলে প্রত্যাশা করা যায়।

শুধু উত্তম শিক্ষাক্রম প্রণীত হলেই চলবে না, তার বাস্তবায়নের দিকটি আরও গুরুত্বপূর্ণ। কী পদ্ধতিতে পাঠদান করা হলে শিখনফল অর্জন সম্ভব তাও নির্ধারণ করতে হবে। সফলভাবে গণিত শিক্ষাদানের জন্য শিক্ষক প্রশিক্ষণের বিকল্প নেই। পাঠদানের বিষয় ও পদ্ধতি সম্পর্কে শিক্ষকদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ দিতে হবে। প্রশিক্ষণ শুধু গ্রহণের বিষয় নয়, মনোজাগতিক অর্জনের বিষয়ও বটে। আরও একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো শ্রেণিকক্ষের পরিবেশ। অবকাঠামোগতভাবে পাঠদানের উপযুক্ত শ্রেণিকক্ষে উপযুক্ত সজ্জাও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পাঠদান আন্দদায়ক এবং কৌতূহল-উদ্দীপক হতে হবে। জবরদস্তিমূলক শিক্ষাপদ্ধতি জাতিকে কখনোই সামনে নিয়ে যেতে পারবে না।

গণিত শিক্ষার মানোন্নয়নে কাজ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করে খুলনা বিভাগের মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নিয়ে এ ফোরাম গঠিত হয়। গণিত ফোরাম খুলনা এ পর্যন্ত বিভাগীয় পর্যায়ে ৬টি খুলনা গণিত সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং কলেজ পর্যায়ের শিক্ষকদের নিয়ে বিভিন্ন উপজেলায় দিনব্যাপী কর্মশালার আয়োজন করেছে। এরকম ১২টি সফল কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গণিত শিক্ষার মানোন্নয়নে কাজ করে যাওয়াই গণিত ফোরাম খুলনার অবিচল লক্ষ্য। এ লক্ষ্যকে সামনে রেখে গণিত ফোরাম খুলনা কর্মসূচি নির্ধারণ করে থাকে। গণিত পাঠ্যক্রম এবং শিক্ষক প্রশিক্ষণ বিষয়েও কাজ করে যাচ্ছে এ ফোরাম।

২০০৮ সালে ফোরাম গঠিত হওয়ার পরপরই একটি উপযুক্ত শিক্ষাক্রম নির্ধারণে কোন শ্রেণিতে কী কী বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন, সে বিষয়ে একটি পর্যালোচনা প্রতিবেদন তৈরি করে। একই সাথে সেই সময়ের বিদ্যালয় পর্যায়ের গণিত বইয়ের বিভিন্ন ভুল এবং অসঙ্গতিও চিহ্নিত করা হয়। বিস্তারিত প্রতিবেদন জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)-এ প্রেরণ করা হয়। জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০-এর আলোকে ২০১৩ সালে প্রণীত ১ম শ্রেণি থেকে ৯ম-১০ম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ের একটি পর্যালোচনা রিপোর্টও এনসিটিবিতে প্রেরণ করা হয়।

অপরদিকে, শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে নিয়োজিত শিক্ষকদের বাস্তব কারণেই সরকারিভাবে যথাসময়ে পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা সম্ভব হয় না। ফোরামটি সীমিত সামর্থ দিয়ে শিক্ষকদের নিয়ে গণিত শিক্ষা বিষয়ে কর্মশালার আয়োজন করে থাকে। ২০০৮ সালে ফোরামের পক্ষ থেকে বিভিন্ন অঞ্চলের বিদ্যালয় পর্যায়ের গণিত শিক্ষকদের সাথে আলোচনায় উঠে আসে পাঠদানের সমস্যাসমূহের বিভিন্ন দিক। আলোচনার ফলকে ভিত্তি ধরে নির্ধারণ করা হয় আলোচ্য বিষয় এবং পদ্ধতি। এসবের ভিত্তিতে দিনব্যাপী কর্মশালার আয়োজন করা হয়। প্রতি কর্মশালা থেকে যে নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন করি, তার আলোকে পরবর্তী কর্মশালা বিন্যাস করা হয়।

গণিত ফোরামের কার্যক্রম পরিচালনা করতে গিয়ে আমরা কিছু উজ্জ্বল সম্ভাবনা দেখেছি, সেই সাথে কিছু প্রতিবন্ধকতাও উপলব্ধি করেছি। সম্ভাবনার দিকগুলো উন্মোচন এবং প্রতিবন্ধকতাগুলো অপসারণ করা হলে গণিত শিক্ষার মানোন্নয়নে আমাদের প্রয়াসে অনেক অগ্রগতি হতে পারে। শুধু গণিত শিক্ষাই বা কেন? সকল বিষয়ে বিভিন্ন আঞ্চলিক সংগঠন গঠন করে একই পদ্ধতিতে কাজ করার সুযোগ আছে। তাছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার বাইরে গণসচেতনতা সৃষ্টির জন্যও এ পদ্ধতি অবলম্বন করা যায়।

গণিত ফোরামের কার্যক্রমে সম্ভাবনার দিক

– উন্নয়নশীল একটি দেশের সরকার এককভাবে সকল কাজ সম্পন্ন করতে পারে না। জাতীয়ভাবে কোনো সংগঠনের পক্ষে সারা দেশে একটি কার্যক্রম হাতে নেওয়াও অনেক বড় কাজ। ফলে আঞ্চলিকভাবে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে ছোট ছোট উদ্যোগ নিয়ে কাজ করা সম্ভব।

– ছোট ছোট উদ্যোগে সামিল হলে দৈনন্দিন কাজের ফাঁকেই কিছুটা সময় বের করে নেয়া যায় যা জাতীয়ভাবে গৃহীত কর্মসূচিতে সম্ভব হয় না।

– শিক্ষক প্রশিক্ষণ একটি জীবনব্যাপী প্রক্রিয়া। মাঝে মাঝে প্রশিক্ষণমূলক কর্মসূচিতে অংশ নিলে নতুন নতুন জ্ঞান ও পদ্ধতি সম্পর্কে ধারণা জন্মে। শিক্ষকদের একটি সমাবেশে শুধু শিক্ষা নিয়েই আলোচনা হয়, ফলে প্রত্যেকের কাছ থেকে অন্যরা কিছু না কিছু শিখে থাকেন, যা শ্রেণি পাঠদানে সহায়ক হয় এবং মনস্তাত্ত্বিক ইতিবাচক পরিবর্তন হয়।

– মাঝে মাঝে একত্র হলে পারস্পরিক বন্ধুত্ব সুদৃঢ় হয়। তখন নিজেরাই নিঃসংকোচে পরস্পরের সাথে সমস্যা নিয়ে আলোচনা করতে পারেন। সেক্ষেত্রে শিক্ষকদের অহমবোধ প্রতিবন্ধক হতে পারে না। একটি আঞ্চলিক ফোরাম এ বন্ধনের প্লাটফর্ম হতে পারে।

– উত্তরপত্র মূল্যায়নে বিভিন্নজনের দৃষ্টিভঙ্গি বিভিন্ন। তার ফলে শিক্ষার্থীই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পারস্পরিক মতবিনিময় এ ব্যবধান কমিয়ে আনতে সহায়ক। গণিত ফোরাম এক্ষেত্রে বিশেষ ইতিবাচক পরিবর্তন লক্ষ্য করেছে।

– শিক্ষার্থীদের গণিতে আগ্রহ বাড়ার সাথে সাথে শিক্ষকগণও শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের কৌতুহল নিবারণে যথেষ্ট সচেতন থাকতে পারেন।

– শ্রেণিকক্ষের বাইরে গণিতচর্চা হলে শ্রেণিকক্ষেও তার ইতিবাচক প্রভাব পড়ে।

– অল্প অঞ্চলের মানুষের মধ্যে যোগাযোগ সাধিত হয় বলে সমাজসেবামূলক কাজে সহজে অন্যকে উদ্বুদ্ধ করা যায়। প্রতিটি কর্মসূচি বাস্তবায়নে স্বল্প অর্থব্যয় হয় বলে সহজে কর্মসূচি নেয়া যায়। সামাজিক পৃষ্ঠপোষক পাওয়া সহজ হয়। এমনকি সদস্যবৃন্দ সামান্য ভূমিকা পালন করেও একটি কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে পারেন।

– আপাতদৃষ্টিতে বাস্তবায়িত কাজের পরিমাণ কম মনে হলেও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এরূপ কর্মসূচি হাতে নিলে ছোট ছোট উদ্যোগের সামগ্রিক ফল অনেক বড় হয়। দীর্ঘমেয়াদে এর পরিমাণ জ্যামিতিকভাবে বাড়তে থাকে।

– পরিপার্শে¦র জনসমষ্টির সামনে সামাজিক ছোট ছোট কর্মসূচি বাস্তবায়িত হতে দেখলে অন্যরাও নিজেদের পরিমণ্ডলে কোনো কমন ইস্যুতে একত্র হয়ে সামাজিক কাজ করতে উদ্বুদ্ধ হতে পারেন।

প্রতিবন্ধকতাসমূহ

– শিক্ষা ক্ষেত্রটিকে সর্বদাই শুধু সরকারের দায় হিসাবে মনে করা হয়। ফলে সামাজিক দায় হিসাবে গ্রহণ করা হয় না।

– শিক্ষাসংক্রান্ত সরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহ সরকারি দায়িত্ব নয় বলে বেসরকারি সামাজিক উদ্যোগকে খুব একটা গুরুত্ব দিতে চান না।

– সামাজিক কাজের প্রধান প্রতিবন্ধক অর্থায়ন। বিভিন্ন সামাজিক কাজে অর্থায়ন করার মানসিকতা আমরা দেখি। কিন্তু নিরবে-নিভৃতে অর্থায়ন করার মানসিকতা খুব বেশি দেখা যায় না। ফলে অর্থ সংকটে অনেক কর্মসূচি ভালোভাবে বাস্তবায়ন করা যায় না। পৃষ্ঠপোষকতা করার জন্য নিয়মিত এক বা একাধিক পৃষ্ঠপোষক পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।

– প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রমকে ব্যাহত না করে কর্মসূচি নিতে হলে ছুটির দিনগুলো বেছে নিতে হয়। ফলে শিক্ষকরা ছুটির দিনে ব্যাক্তিগত কাজ ফেলে কর্মসূচিতে অংশ নিতে যৌক্তিভাবেই ইতস্তত করেন।

– প্রচার মাধ্যমের আনুকুল্য পেলে একটি সংগঠন নিজেদের কর্মসূচি দ্রুত ছড়িয়ে দিতে পারে। ফলে সংগঠন এবং তার কার্যক্রম জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ছোট ছোট আঞ্চলিক সংগঠন প্রচার মাধ্যমের খুব বেশি আনুকুল্য পায় না। প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে সারা বছর কর্মসূচি নেয়া যায় না এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে অনেক সময় কর্মসূচি গ্রহণে অসুবিধার সৃষ্টি হয়।

প্রতিবন্ধকতা যাই থাকুক না কেন, একদল নিবেদিত মানুষ সামান্য পৃষ্ঠপোষকতা পেলে একটি সামাজিক কর্মসূচি চালিয়ে নেয়া সম্ভব।

কে এম রব্বানী: সহযোগী অধ্যাপক, গণিত, সরকারি বি এল কলেজ, খুলনা।

কোন মন্তব্য নেই

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Exit mobile version