বাড়ি শিক্ষাব্যবস্থা

দেশের বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে আপনি কি সন্তুষ্ট?

বাংলাদেশের শিক্ষা
বাংলাদেশের শিক্ষা

মোঃ তৌফিক ইমাম চৌধুরী লিখেছেন বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে

বর্তমানে শিক্ষাব্যবস্থা আছে তা নিয়ে কি আপনি পুরোপুরি সন্তুষ্ট? প্রাথমিক কিংবা নিম্নমাধ্যমিক শ্রেণীতে একজনকে অনেকগুলো বিষয়ে পড়তে হয়। তার যুক্তিসঙ্গত কারণও আছে। মাধ্যমিকেও না হয় অনেক বিষয় পড়লাম, কিন্তু উচ্চমাধ্যমিকেও কেন এতগুলো বিষয় পড়তে হবে? কেউ যদি পদার্থবিদ্যায় পড়তে আগ্রহী হয়, তবে তাকে কেন বাধ্যতামূলকভাবে জটিল জটিল বাংলা কবিতার নিগূঢ় তত্ত্বের ব্যখ্যা দিতে হবে? অথবা জটিল ব্যাকরণের নিয়ম মুখস্হ করতে হবে? কিংবা কেউ যদি হিসাববিজ্ঞান পড়তে চায়, কেন সে পদার্থবিজ্ঞান বা রসায়ন পড়ার অনুমতি পাবে না? অর্থাৎ কেউ বিজ্ঞান/বাণিজ্য/কলা এই তিনটি বিভাগের একটি নিলে কেন তাকে বাধ্যতামূলকভাবে কয়েকটি বিষয় পড়তে কিংবা না পড়তে হবে?

একজন জীববিজ্ঞান শিক্ষার্থীর বাংলা ব্যাকরণ নাও পড়তে ইচ্ছা হতে পারে। কেন তাকে ব্যাকরণ পড়তে হবে? অথবা একজন ইতিহাসের ছাত্রের রসায়ন পড়ার ইচ্ছা হতে পারে, কেন সে রসায়ন পড়তে পারবে না? তার মানে মূল প্রশ্নটা দাড়াচ্ছে, যার যা ইচ্ছা সে সম্পূর্ণভাবে সেই বিষয় পড়তে পারবে না কেন? প্রাতিষ্ঠানিকভাবে না পড়তে পারলেও নিজ উদ্যোগে কেউ সেসব বিষয় পড়ল, কিন্তু সেই বিষয়ে উচ্চতর শিক্ষায় অথবা চাকুরির বাজারে তার দাম নাই। কারণ এসব জায়গায় শুধু সার্টিফিকেটকে মূল্য দেয়া হয়। শিক্ষার মান কি সার্টিফিকেটে মাপা যায়? এর চেয়ে ভালো কোন পদ্ধতি নেই? আর যদি নাই থাকে, তাহলে অন্তত নিজ উদ্যোগে যারা কোনো বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করেছে, সরকার তাদের জন্য কমপক্ষে একটি পরীক্ষার আয়োজন করতে পারে। সেই বিষয়ে কৃতকার্য হলে অন্তত প্রাতিষ্ঠানিকভাবে শিক্ষিতদের সমমানের একটি সার্টিফিকেট পাওয়া যাবে। আমি জানি না শিক্ষার মান পরিমাপের জন্য কোনো প্রতিষ্ঠান আছে কিনা; যদি থাকে তবে সাক্ষরের সংখ্যার দিক থেকে নয়, শিক্ষার মানে আমাদের দেশ কত নম্বর পেয়ে কততম হয়েছে? এক কম্পিউটার শিক্ষার বই দেখেই মনে হয় বইয়ের অধিকাংশই একটি বিশেষ কোম্পানির প্রোডাক্টের বিজ্ঞাপন!

বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা পদ্ধতিতে ১৮ বছর বয়সে এ পর্যন্ত প্রায় ১২ বছর প্রাতিষ্ঠানিকভাবে শিক্ষাগ্রহণ করছি। যদিও এটা কোনো সময়ই না, তবু গুরুত্বের দিক থেকে এই সময়ের দাম বেশি নয় কি? এই সময়ে কোনো শ্রেণীতে ভালো নৈতিক শিক্ষা পেয়েছি বলে মনে পড়ে না। মানুষের সাথে কিভাবে মিশতে হয়, কিভাবে ভদ্রভাবে কথা বলতে হয়, কোনটা ঠিক, কোনটা বেঠিক, কোন কাজে মানুষ কষ্ট পায় ইত্যাদি কি প্রাথমিক শ্রেণীতে খুব ভালোভাবে শিখানো উচিত না?

হয়তো যারা ভালো পরিবারের সন্তান তারা এসব শেখে। কিন্তু যারা পরিবার থেকে এসব শিখতে পারে না, তারা নিজেরাও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে, সাথে ভালোদেরও মন্দ করে ফেলে। আমরা সর্বোচ্চ বলে থাকি- “ওসব বাজে ছেলেদের সাথে মিশবে না।” কিন্তু এই ‘ওসব’ ছেলেদের শোধরাবার দায়িত্ব তাদের পরিবার কিংবা আমরা কেউই নেই না। প্রাথমিক শ্রেণীতে ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা আরও বেশি করে শেখালে দুর্নীতি ও নোংরামি কোনো শাস্তির ভয় না থাকলেও কমে যেত নয় কি?

লেখক: শিক্ষার্থী, দ্বিতীয় বর্ষ, বাণিজ্য বিভাগ, দিঘাপতিয়া এমকে কলেজ, নাটোর।

1 মন্তব্য

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Exit mobile version