হাবিবুর রহমান হারুন লিখেছেন শিক্ষাক্ষেত্রে ডিজিটালাইজেশন ও তার বিড়ম্বনা নিয়ে
মহাজোট সরকারের ডিজিটালাইজেশনের ঢেউ লেগেছে প্রায় সকল সরকারি প্রতিষ্ঠানে। সরকারি বিভিন্ন বিভাগের টেন্ডার থেকে শুরু করে বিদেশে শ্রমিক প্রেরণ পর্যন্ত প্রায় সব ক্ষেত্রেই ডিজিটালাইজেশনের ছোঁয়া লেগেছে। সাধারণ মানুষ বিভিন্নভাবে এর সুফলও ভোগ করছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন বিভাগে ডিজিটালাইজেশন সাফল্য সর্বাধিক হলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে এর ব্যবহারকারীদেরকে বিড়ম্বনার শিকার হতে হচ্ছে।
সরকার ডিজিটালাইজেশন নীতি গ্রহণের পর বিগত পাঁচ বছরে যেসব বিভাগে তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে তার মধ্যে শিক্ষা বিভাগ অন্যতম। এ বিভাগের ডিজিটালাইজেশনের বিশাল সাফল্য এসেছে শিক্ষার্থী ভর্তি প্রক্রিয়ায়। কারিগরী শিক্ষাবোর্ডের বিভিন্ন ডিপ্লোমা কোর্সে ভর্তি প্রক্রিয়ার সমুদয় কাজ এখন একজন শিক্ষার্থী ডিজিটাল প্রযুক্তির বদৌলতে ঘরে বসেই মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেট-কম্পিউটারের মাধমে সম্পন্ন করতে পারছে। উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির অধিকাংশ কাজই ডিজিটাল পদ্ধতিতে হচ্ছে। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের ইলেক্ট্রনিক রেজিস্ট্রেশন (ESIF), জেএসসি, এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের ফরম ফিলাপ (EFF) করা হচ্ছে ইন্টারনেটের মাধ্যমে। বর্তমানে ডিজিটালাইজেশনের ক্ষেত্রে এ বিভাগের নাম শুধু সাফল্যের শীর্ষেই নয়, অন্য যেকোনো বিভাগের চাইতে অনেক অনেক দূর এগিয়ে অবস্থান করছে। কিন্তু এই ব্যাপক সাফল্যকে কিছুটা ম্লান করে দিচ্ছে ন্যাশনাল কারিকুলাম এন্ড টেক্সটবুক বোর্ড (NCTB), জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও ক্ষেত্রবিশেষে শিক্ষাবোর্ডের কিছু কিছু পদক্ষেপ।
এনসিটিবির ওয়েবসাইট থেকে বিভিন্ন শ্রেণীর পাঠ্যবই ডাউনলোড করার ব্যবস্থা চালু ছিল বেশ কয়েক বছর থেকেই। সংশ্লিষ্টরা এর থেকে বিশেষভাবে উপকৃত হচ্ছিল। এতদিন পিডিএফ ফরমেটের বই যেকোনো কম্পিউটার থেকে ডাউনলোড করে পড়তে অসুবিধা হতো না। কিন্তু এ বছর বই ডাউনলোড করতে গিয়ে বেকায়দায় পড়তে হচ্ছে শিক্ষার্থী-শিক্ষকসহ সবাইকে। ডাউনলোড করার পর সব লেখা হিজিবিজি হয়ে মনিটরের পর্দায় ভেসে উঠছে। কারণ হলো বইগুলোকে Shabrina TonnyMJ নামক এমন এক ফন্টে লেখা হয়েছে যা সচারচর কারো কম্পিউটারে নেই। লেখার ক্ষেত্রে সাধারণত বিশেষ কোনো ফন্ট ব্যবহার করা হলে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে ডাউনলোড হওয়ার ব্যবস্থা করা থাকে যাতে পাঠকের কোনো অসুবিধা না হয়। কোনো কোনো সময় দেখা যায় বিশেষ সেই ফন্ট ডাউনলোড ও ইনস্টল করার নির্দেশনা সংবলিত লিংক দেওয়া থাকে, যা থেকে পাঠক কয়েক সেকেন্ডেই তা ডাউনলোড ও ইনস্টল করে নিতে পারে। কিন্তু এনসিটিবির ওয়েবসাইটে সেরকম সুবিধা রাখা হয়নি। ওই ফন্ট ইনস্টল করার জন্য অনেক ঘাটাঘাটির পর দেখা যায় বিশাল এক ফাইল ডাউনলোড করতে হবে। প্রায় ঘণ্টাখানেক ধরে ডাউনলোড করার পর দেখা যায় ইনস্টল হচ্ছে না। এতকিছুর পরও আপনি বইটি পড়তে পারবেন না। অথচ সংশ্লিষ্টদের এমন বিড়ম্বনায় পড়ার যুক্তিগ্রাহ্য কারণ নেই।
শিক্ষাবোর্ড ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েব সাইটে প্রয়োজনের সময় ঢুকতে না পারা, প্রয়োজনীয় তথ্য যথাযথ ট্যাব বা লিংকে না পাওয়ার বিড়ম্বনা সইতে হয় হরহামেশাই। শিক্ষাবোর্ড কর্তৃপক্ষের কিছু কিছু সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপ অহরহই শিক্ষার্থী-শিক্ষক-অভিভাবকসহ সংশ্লিষ্টদের ডিজিটালাইজেশনের সুবিধার পরিবর্তে ভোগান্তিতে ফেলছে। সম্প্রতি বোর্ড কর্তৃপক্ষ এমনি এক সিদ্ধান্তে সকল বেসরকারি মাধ্যমিক ও নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়কে ওয়েব পেইজে ঢোকার পাসওয়ার্ড দেওয়ার জন্য এক হাজার টাকা করে চার্জ নিয়েছে। বিদ্যালয়ের ইমেইল অ্যাকাউন্টে অথবা বিদ্যালয় প্রধানের মোবাইলে এসএমএস করে না দিয়ে প্রত্যেক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে বোর্ডে ডেকে পাঠিয়েছে। ফলে তাদেরকে এই পাসওয়ার্ড সংগ্রহ করার জন্য ঢাকায় বোর্ড অফিস পর্যন্ত যেতে হয়েছে সহস্রাধিক টাকা ও সময় ব্যয় করে।
ডিজিটালাইজেশন তথা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতের সম্প্রসারণের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে তথ্যের আদান-প্রদানকে সহজলভ্য করে মানুষের সময়, শ্রম ও অর্থের সাশ্রয় করা। এক্ষেত্রে পরিকল্পনা প্রণয়ন পর্যায়ে দেশে বিরাজমান তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সুবিধা ও সুবিধাভোগীদের প্রযুক্তিজ্ঞানের কথা যেমন মাথায় রাখতে হবে, তেমনি গৃহীত পদক্ষেপ বা পদ্ধতি কতটা সুবিধা দিতে পারছে তাও নিয়মিত মনিটরিং করতে হবে। আর তাহলেই আমরা এগিয়ে যেতে পারবো তথ্যপ্রযুক্তির অপার সম্ভাবনার রাজ্যে।
হাবিবুর রহমান হারুন: শেরপুর জেলা প্রতিনিধি, দৈনিক বর্তমান ও ফোকাস বাংলা।
লেখক পরিচিতি
সম্পাদক বাংলাদেশের শিক্ষা
এই লেখাটি সম্পাদক কর্তৃক প্রকাশিত। মূল লেখার পরিচিত লেখার নিচে দেওয়া হয়েছে।