প্রিয় পাঠক, আপনারা জানেন যে, ২০১২ সালের জুন মাস থেকে ‘শুদ্ধস্বর-বাংলাদেশের শিক্ষা’ সেরা লেখা পুরস্কারের আয়োজন করা হয়েছে। পুরস্কারের নিয়মানুযায়ী, ত্রৈমাসিক প্রকাশিত লেখাগুলো থেকে নির্ধারিত বিচারক একটি লেখা সেরা লেখা হিসেবে ঘোষণা দিবেন। পাশাপাশি কেন লেখাটি তাঁর কাছে সেরা বলে মনে হয়েছে, তারও একটি ব্যাখ্যা থাকবে বিচারকের পক্ষ থেকে। এই পুরস্কার-প্রক্রিয়ায় ‘বাংলাদেশের শিক্ষা’ ওয়েব সাইটের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে প্রকাশনা সংস্থা ‘শুদ্ধস্বর’। সেরা লেখার লেখককে শুদ্ধস্বর থেকে প্রকাশিত ৫০০ টাকা মূল্যমানের বই প্রদান করা হবে। আপনারা জানেন, ইতোমধ্যে ২০১২ সালের জুলাই-সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রকাশিত লেখাগুলোর মধ্যে সেরা লেখার নির্বাচন হয়ে গেছে।
আমরা আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি যে, ২০১২ সালের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর (ত্রৈমাসিক) প্রান্তিকে প্রকাশিত লেখাগুলোর মধ্যে ‘শিক্ষায় ডিজিটাল ক্লাসরুম’ বিচারকের কাছে সেরা লেখা হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে। লেখাটি তৈরি করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার্থী ফারহানা মান্নান। আর অক্টোবর-ডিসেম্বর ২০১২ প্রান্তিকের বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন ব্র্যাক শিক্ষা কর্মসূচির প্রোগ্রাম ম্যানেজার ও বাংলাদেশ ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজ টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন (বেল্টা)-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট মাছুম বিল্লাহ। লেখাটি মূল্যায়ন করতে গিয়ে মাছুম বিল্লাহ বলেছেন:
এটি একটি একটি সময়োপযোগী লেখা। বর্তমান যুগে আইসিটি এবং ইংরেজি হচ্ছে টিকে থাকার অন্যতম দক্ষতা- এ বিষয়টি ফারহানা মান্নানের লেখায় সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে ।
একুশ শতকের মাল্টিকালচারাল সাক্ষরতার মধ্যে পড়ে মাল্টিকালচারাল মিডিয়া, তথ্য, মনোজাগতিক, পরিবেশ-সম্পর্কিত, অর্থনৈতিক, সাইবার সাক্ষরতা ইত্যাদি। এসব সাক্ষরতা বাড়াতে হলে পৃথিবীর অন্য দেশের ছাত্রছাত্রীদের সাথে মিথস্ক্রিয়া বাড়ানো দরকার। লেখক মাল্টিকালচারাল সাক্ষরতা অল্পকথায় পাঠকদের জন্য ভালোভাবে বুঝানোর চেষ্টা করেছেন।
একুশ শতকের কারিকুলামের একটা বৈশিষ্ট হচ্ছে এটি আন্তঃবৈষয়িক, প্রজেক্টভিত্তিক ও গবেষণাচালিত। এটি জাতীয় ও বিশ্বপর্যায়ের কমিউনিটির সঙ্গে জড়িত। এ শতকের কারিকুলাম উচ্চপর্যায়ের চিন্তন-দক্ষতা, মাল্টিপল ইনটেলিজেন্স, টেকনোলোজি এবং মাল্টিমিডিয়ার সংমিশ্রণ।
লেখক একটি বাস্তব কথা বলেছেন, কম্পিউটার, প্রিন্টার, ডিজিটাল ক্যামেরা, স্ক্যনার, সায়েন্স প্রোব, প্লটার, ইলেকট্রনিক হোয়াইটবোর্ড, মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টের উল্লেখযোগ্য ব্যবহার আমাদের দেশের শ্রেণীকক্ষগুলোতে একলাফে প্রয়োগ সম্ভব নয়। কিন্তু প্রযুক্তির ব্যবহার শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল পদ্ধতিতে গড়ে তুলতে সহায়ক হবে। শিক্ষার্থীদের ডিজিট্যাল ক্লাসে উৎসাহিত করার জন্য লেখক মোটিভেট করেছেন এভাবে যে, এটি ভবিষ্যতে চাকরির বাজারে লড়াই করতে শেখাবে। আমার মতে, এটি যথার্থ মোটিভেশন।
২০১১ সালে ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে কম্পিউটার বিষয়টির প্রবর্তন একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হলেও পাঠ্যবিষয় হিসেবে কম্পিউটার অন্তর্ভুক্ত করলেই শিক্ষার্থীরা প্রযুক্তি ব্যবহারে পটু হয়ে উঠবে না। এজন্য ব্যক্তি ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে প্রয়োজনীয় কিছু পদক্ষেপের কথাও তিনি তাঁর লেখায় উল্লেখ করেছেন। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন শুধু ৪৫ মিনিটের ক্লাসে হাতেকলমে প্রযুক্তির ব্যবহার শিক্ষার্থীরা কতোটা শিখতে পারবে? এই প্রশ্নটির দিকে আসলেই নজর দেয়া দরকার। আশা করি, এসব বিষয়ে পরিবর্তন, পরিবর্ধন ও পরিমার্জনের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নজর দিবেন। এসবের পাশাপাশি লেখক উন্নত বিশ্বে আইসিটি ব্যবহারের পরিসংখ্যান দিয়েছেন এবং সবশেষে বলেছেন তৃতীয় বিশ্বে সরকারের একার পক্ষে শিক্ষা উন্নয়ন ও শিক্ষায় প্রযুক্তির ব্যবহার ব্যাপক হারে করা সম্ভব নয়, এক্ষেত্রে ব্যক্তিগত উদ্যোগকেও তিনি উৎসাহিত করার চেষ্টা করেছেন তাঁর লেখায়। উপর্যুক্ত বিষয়গুলো বিবেচনায় আমি অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর ২০১২ সময়ে এ লেখাটিকেই শ্রেষ্ঠ লেখা বলে মনে করি।
বিচারক মাছুম বিল্লাহর নির্বাচন অনুসারে অক্টোবর-ডিসেম্বর ত্রৈমাসিক প্রান্তিকে দারুণ একটি লেখার জন্য পুরস্কারের দাবিদার হলেন ফারহানা মান্নান। অভিনন্দন ফারহানা মান্নান। আমরা আশা করবো, আইসিটি ও শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতে আপনি আরও নতুন নতুন ভাবনা পাঠকদের সামনে তুলে ধরবেন। পাশাপাশি বর্তমানে প্রচলিত দিকগুলোকে চ্যালেঞ্জ করে কীভাবে সেগুলোকে আরও কার্যকর ও টেকসই করা যায়, সে ব্যাপারেও আপনার প্রস্তাবনা আমরা জানতে চাই। খুব শিগগিরই আপনার ঠিকানায় পৌঁছে যাবে শুদ্ধস্বর থেকে প্রকাশিত ও আমাদের নির্বাচিত ৫০০ টাকা সমমানের অমূল্য উপহার- বই।
আমরা একইসঙ্গে ধন্যবাদ জানাতে চাই বিচারক মাছুম বিল্লাহকেও যিনি তাঁর মূল্যবনা সময় বের করে প্রতিটি লেখা পড়েছেন এবং সেরা লেখা নির্বাচন করেছেন। পাশাপাশি তিনি ত্রৈমাসিক সেরা লেখা নির্বাচনের যে চমৎকার ব্যাখ্যা দিয়েছেন, সেটি থেকেও আমরা উপলব্ধি করতে পারি যে, লেখক ফারহানা মান্নান যে ভাবনার সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন আমাদের পাঠকদের, বিচারক সেটির সঙ্গে একাত্ম হয়েছেন, দিয়েছেন আরও কিছু পরামর্শ।বিচারকের প্রতি রইলো আমাদের কৃতজ্ঞতা।
নিচে পাঠকদের সুবিধার জন্য ফারহানা মান্নানের বিস্তারিত পরিচয় তুলে ধরা হলো।
ফারহানা মান্নান ২০০৬ সালে ইস্ট-ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি থেকে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে বিএসসি ডিগ্রি অর্জন করেন। ২০১১ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বিএড ডিগ্রি অর্জন করেন। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে সায়েন্স, ম্যাথম্যাটিকস ও টেকনোলজি বিভাগে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে অধ্যয়নরত এবং ‘আইসিটি ইন এডুকেশন’ সেক্টরে “A lack of Science teachers’ confidence and access to ICT resources in secondary level science classroom” শিরোনামে থিসিস নিয়ে কাজ করছেন।
অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে নিজস্ব ফার্ম CREATIVE (a house of professional engineers and ICT Experts) -এ কাজ করেন ২০০২-২০০৪ সাল পর্যন্ত। শিক্ষাক্ষেত্রে প্রথম কাজের শুরু ২০০৬ সালে সুদূর কানাডায়। সেখানে তিনি প্রাকপ্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে ‘রিডিং বাডিজ
’ প্রোগ্রামে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করেন। ২০০৮-২০১০ সাল পর্যন্ত ইংরেজি মাধ্যম স্কুল মাস্টারমাইন্ডে ও-লেভেলে আইসিটি বিষয়ে শিক্ষকতা করেন। ২০১১ সালে এনায়েতপুরে অনুষ্ঠিত UNESCO কর্তৃক আয়োজিত Capacity Building Workshop on Astronomy for secondary teachers-এ তিন দিনের একটি কর্মশালায় অংশ নেন। বর্তমানে খানবাহাদুর আহছানউল্লাহ টিটিসিতে খণ্ডকালীন প্রভাষক হিসেবে কাজ করছেন।
শিক্ষকতা ও শিক্ষা-গবেষণার পাশাপাশি তিনি নিয়মিত লেখালেখি করে থাকেন। অনলাইন বিভিন্ন ব্লগে তিনি শিক্ষা বিষয়ে লেখালেখি করেন। সুপরিচিত ব্লগ যেমন – বিডিনিউজ, উন্মোচন, বাংলাদেশের শিক্ষা প্রভৃতি অনলাইন পোর্টালে তাঁর শিক্ষা বিষয়ক ব্লগগুলি প্রশংসা পেয়েছে। তাঁর দুটি প্রকাশিত গ্রন্থ: নিরীশ্বর নন্দিনী (২০১৩), সুকুমার বৃত্তি (২০১০)।
আমাদের ত্রৈমাসিক এই উদ্যোগ বা পুরস্কার সম্পর্কে আপনাদের কোনো প্রশ্ন, মতামত বা পরামর্শ থাকলে এখানে জানাতে পারেন। আশা করছি, এই উদ্যোগের প্রতিটি পর্যায়ে আপনাদেরকে আমরা সাথে পাবো। ধন্যবাদ।
লেখক পরিচিতি
সম্পাদক বাংলাদেশের শিক্ষা
এই লেখাটি সম্পাদক কর্তৃক প্রকাশিত। মূল লেখার পরিচিত লেখার নিচে দেওয়া হয়েছে।