বাড়ি শিশুর বিকাশ

অটিজম, অটিস্টিক শিশু ও তাদের শিক্ষা

অটিজম
অটিজম

খলিল হাসান লিখেছেন অটিজম, অটিস্টিক শিশু ও তাদের শিক্ষা নিয়ে

অটিজম কোনো মানসিক রোগ নয়। অটিজম হচ্ছে একটি নিউরোলজিক্যাল ও ডেভেপমেন্টাল ডিসঅর্ডার বা স্নায়বিক বিকাশজনিত সমস্যা যা শিশুদের তিন বছরের মধ্যে ধরা পড়ে। অটিজমে আক্রান্তদের সামাজিক মিথষ্ক্রিয়া ও পারস্পরিক যোগাযোগ স্থাপনে সমস্যা হয়। এ-সম্পর্কে আমাদের অনেকের সচেতনতা নেই বললেই চলে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, পিছিয়ে থাকা দেশগুলোতে অটিস্টিক শিশুদের প্রতি অভিভাবক ও সমাজ বিরক্ত হয়ে পড়ে। ফলে তারা সমাজের বোঝা হিসেবে পরিণত হয়।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ইনস্টিটিউট অব পেডিয়াট্রিক নিউরোডিজঅর্ডার অ্যান্ড অটিজম (ইপনা) কর্তৃক দেশব্যাপী পরিচালিত জরিপে দেখা গেছে, বাংলাদেশে ১৬ থেকে ৩০ মাস বয়সী শিশুদের মধ্যে প্রতি ১০ হাজারে ১৭ জন অটিস্টিক। অটিজম মস্তিষ্কের স্নায়বিক সমস্যার কারণে হয়ে থাকে।

বর্তমানে গবেষকরা অটিজমকে ‘অটিজম স্পেকট্রাম ডিজঅর্ডার’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। অটিজম কেন হয় এখনও তার সুনির্দিষ্ট কারণ বের করা সম্ভব হয়নি। তবে বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে— মস্তিষ্কের অস্বাভাবিক জৈব রাসায়নিক কার্যকলাপ, মস্তিষ্কের অস্বাভাবিক গঠন, বংশগতির অস্বাভাবিকতা থেকে এ সমস্যা হতে পারে।

অটিস্টিক শিশুরা একেকজন একেক রকম হয়। তাই তাদের বৈশিষ্ট্যগুলোও ভিন্ন হয়। তবে সামাজিক, যোগাযোগ ও আচরণের মাধ্যমেই তাদের বৈশিষ্ট্যগুলো দেখতে পাওয়া যায়।


অটিজম কেন হয় এখনও তার সুনির্দিষ্ট কারণ বের করা সম্ভব হয়নি। তবে বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে— মস্তিষ্কের অস্বাভাবিক জৈব রাসায়নিক কার্যকলাপ, মস্তিষ্কের অস্বাভাবিক গঠন, বংশগতির অস্বাভাবিকতা থেকে এ সমস্যা হতে পারে।


অটিজম ও সামাজিক আচরণ

শিশুকে নাম ধরে ডাকলে সাড়া তো দেয়ই না, এমনকি চোখ ফিরিয়েও তাকায় না। সে হয়তো নামের ব্যাপারটা বুঝতেই পারে না, একেবারেই নির্লিপ্ত থাকে। অনেক সময় নিজের আত্মীয়-স্বজন বা পিতা-মাতা বা অন্য কেউ ডাক দিলে সে আহবানের বিষয়টি শুনে সঠিকভাবে বুঝতে পেরে যে কাজ বা খেলায় ব্যস্ত ছিলো, সেটি কিছুক্ষণের জন্য থামিয়ে দেয় বটে; কিন্তু যে ডাকছে তার দিকে ফিরেও তাকায় না। পিতা-মাতা বা নিয়মিতভাবে দেখা হচ্ছে এমন আপনজনের চোখে চোখ রেখে তাকায় না। তার কাছে গিয়ে বা কোলে নিয়ে চেষ্টা করলেও দেখা যায়, খুব দ্রুতই সে চোখ সরিয়ে নিচ্ছে।

দৃষ্টিশক্তির অক্ষমতা অটিস্টিক শিশুর মধ্যে প্রকটভাবে দেখা যায়। সমবয়সী শিশুদের সাথে মেলামেশা করতে বা খেলতে চায় না। অন্য শিশুদের খেলতে দেখলে সে একপাশে সরে যায়। অন্যরা কী করছে, সেটি দেখতে বা তাদের সাথে কোনো ধরনের খেলায় অংশগ্রহণ করতে অনীহা বা বিরক্তি দেখায়।

অধিকাংশ অটিস্টিক শিশুর রোগ সনাক্ত করার আগেই পারিবারিক পরিমণ্ডলে ‘অমিশুক’ হিসেবে চিহ্নিত হতে দেখা যায়। অটিস্টিক শিশু কোনো ধরণের আনন্দদায়ক বস্তু বা বিষয় অন্যদের সাথে শেয়ার করে না। সাধারণত শিশুরা কোনো খেলনা হাতে পেলে সবাইকে সেটি দেখাতে চায় বা কথা বলে বা অন্যদের দৃস্টি আকর্ষণ করে। কিন্তু অটিস্টিক শিশুর ক্ষেত্রে এ-ধরনের কোনো খেলনার প্রতি নিজস্ব কিছু আগ্রহ থাকলেও তা নিয়ে উচ্ছ্বাস থাকে না।

স্বাভাবিক শিশুরা কারো কোলে চড়তে বা আদর পেতে পছন্দ করে। কিন্তু অনেক অটিস্টিক শিশু এ-ব্যাপারে একেবারেই নিস্পৃহ থাকে। প্রায়শই অন্য চেনা-অচেনা কোনো ব্যক্তি বা কারো সংস্পর্শে যাওয়াটা তারা তেমন পছন্দ করে না।

অটিজম ও শিশুর যোগাযোগ দক্ষতা

পরিবেশের সাথে যোগাযোগ করার ক্ষমতা শিশুর বিকাশের সাথে সাথেই স্বাভাবিকভাবেই গড়ে ওঠার কথা। অটিস্টিক শিশুর ক্ষেত্রে এ-ধরণের যোগাযোগ তৈরি করার ক্ষমতা অনেকাংশেই হ্রাস পায়। ফলে দেখা যায় ২ থেকে ৩ বছর বয়সে স্বাভাবিক শিশু যেসব শব্দ উচ্চারণ করতে পারে, সমবয়সী অটিস্টিক শিশুরা তা একেবারেই পারে না। তখন সমবয়সী অন্য শিশুদের সাথে তুলনা করে পিতা-মাতা বিষয়টি সহজেই অনুধাবন করতে পারেন।

অনেক ক্ষেত্রেই অটিস্টিক শিশু স্বাভাবিকভাবে কথা বলতে পারলেও একটি বাক্য শুরু করার ক্ষেত্রে অস্বাভাবিক রকম দেরি হয় বা বাক্য শুরু করার পর তা আর শেষ করতে পারে না। এমনও হতে পারে ৩-৫ বছর বয়সেও দু’তিন শব্দের বেশি দিয়ে বাক্য গঠন করতে পারে না। নিজের প্রয়োজনের বিষয়টি উত্তম পুরুষে না বলে নাম পুরুষে বলে। বার বার শোনার পরও কোনো ছড়া থেকে অল্প কিছু শব্দের বাইরে বাকিটুকু বলতে পারে না। শিশু একই শব্দ বা বাক্যাংশ বারবার উচ্চারণ করার প্রবণতা প্রদর্শন করতে পারে।

কেন একই কথা বারবার বলছে বা সেসব শব্দের অর্থ কী, এমন প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে অটিজম-আক্রান্ত  শিশু একঘেয়ে পুনরাবৃত্তি চালিয়ে যায়। বাবা-মা মানা করলেও শোনে না, বরং বিরক্ত হয়, রেগে যায়। বা, নিজেকে প্রকাশের অক্ষমতাজনিত হতাশা থেকে কাঁদতে শুরু করে। তিন বছর বা তারও কম বয়সী শিশুরা তাদের বয়সোপযোগী নানা রকম খেলা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজেরাই তৈরি করে খেলে ।

সেভাবে কথা বলতে না পারলেও ইশারা-ঈঙ্গিত বা হৈ-হল্লার মধ্য দিয়ে তারা লুকোচুরি বা গাড়ির প্রতিযোগিতা বা প্লেন ওড়ানো বা লড়াই বা যুদ্ধ— এমন সব কাল্পনিক খেলাধুলায় রত হয়। কিন্তু অটিস্টিক শিশুরা এরকম করে না। পুতুল, গাড়ি, স্টাফড অ্যানিমেল, যেমন টেডি বিয়ার, মিকিমাউস, খরগোশ ইত্যাদি নিয়ে কল্পনাশ্রয়ী কোনো খেলা যেমন, পুতুলকে খাওয়ানো, পুতুল কাঁদছে, গাড়িটা জোরে চলতে গিয়ে অ্যাকসিডেন্ট করেছে এমন ভান করা ইত্যাদি প্রদর্শন করে; কিন্তু এরা খেলতে পারে না।


অটিস্টিক শিশু বিশেষ ধরনের আচরণ বারবার করতে থাকে। হয়তো হাত দোলাতে থাকে বা আঙুল নাড়াতে থাকে। খেলনার বাক্স উপুড় করে খেলনা বের করে ফেলে, আবার ঢুকিয়ে রাখে। আবার বের করে, আবার ঢোকায়।


অটিস্টিক শিশুর আচরণ

অটিস্টিক শিশু বিশেষ ধরনের আচরণ বারবার করতে থাকে। হয়তো হাত দোলাতে থাকে বা আঙুল নাড়াতে থাকে। খেলনার বাক্স উপুড় করে খেলনা বের করে ফেলে, আবার ঢুকিয়ে রাখে। আবার বের করে, আবার ঢোকায়।

এভাবে চলতে থাকে। কোনো কোনো শিশু ঘরোয়া জিনিসপত্র দিয়ে খেলাধুলা করতে চায়। অনেক সময় দেখা যাচ্ছে হয়তো লবনদানি থেকে লবন ঢেলে বাটিতে রাখছে, আবার সেটি আগের জায়গায় নিচ্ছে বা দুটো গ্লাস নিয়ে এক গ্লাস থেকে অন্য গ্লাসে জল ঢালাঢালি করছে বা করেই চলেছে। একই কাজ বার বার করে দীর্ঘসময় কাটিয়ে দেয়। কয়েক ঘণ্টাও একইভাবে চালাতে পারে।

অনেক অটিস্টিক শিশু কোনো ধরনের শব্দ বা আওয়াজ পছন্দ করে না। জোরে কথা বললে বা টিভি চালালে সে বেশ অস্বস্তি বোধ করে, কান্নাকাটি করে বা কখনও কখনও চিৎকার করতে থাকে। অটিস্টিক শিশুরা প্রাত্যহিক রুটিন মেনে চলতে পছন্দ করে। দৈনন্দিন যে ধরনের জীবনযাপনে অভ্যস্ত, তার কোনো ব্যতিক্রম হলেই অটিস্টিক শিশু মন খারাপ করে, কাঁদে বা চিৎকার করতে থাকে।

বাসা ছেড়ে অন্য কোথাও গেলে সে অস্বস্তিতে থাকে। রাতে ঘুমানোর আগে হাতমুখ ধুয়ে, কাপড় পরিবর্তন করে বিছানায় যাওয়ার অভ্যাস হয়তো প্রায় সব শিশুরই থাকে। কিন্তু কখনও এর ব্যতিক্রম হলেও সাধারণ শিশু কিছু মনে করে না; কিন্তু অটিস্টিক শিশুরা এসব ব্যাপকভাবে প্রতিক্রিয়া দেখায়। পারিপার্শিক অবস্থার কোনো পরিবর্তন তারা সহ্য করতে পারে না ।

অটিস্টিক শিশুদের কোনোভাবেই প্রতিবন্ধী বলা যাবে না, কেননা প্রতিবন্ধকতা অর্থ হলো বিশেষ কোনো বাধার কারণে কোনো কাজ করতে না পারা। অনেক মানুষের হাত বা পা থাকে না অথবা শরীরের অন্য কোনো অঙ্গ না থাকায় তারা অনেক কাজ করতে পারে না— এটি হচ্ছে প্রতিবন্ধকতা। যে এই প্রতিবন্ধকতার শিকার সে প্রতিবন্ধী

আবার কোনো ব্যক্তি যদি তার বয়স অনুযায়ী ব্যক্তিগত বা সামাজিক পর্যায়ে আচরণ করতে সক্ষম না হয়, তবে তাকে মানসিক প্রতিবন্ধী বলা হয়। এদের বুদ্ধির বিকাশ ঘটে না।

কিন্তু অটিস্টিক শিশুদের সাধারণত মানসিক ক্ষমতার বিকাশ বন্ধ হয় না। শুধু তার বিকাশ অনেক সময় কাঙ্ক্ষিত হয় না। তবে শিশুর মধ্যে অটিজম ও প্রতিবন্ধিত্ব একসঙ্গে থাকতে পারে। যথাযথ চিকিৎসা ও সেবার মাধ্যমে তাদের সারিয়ে নেওয়া সম্ভব।

অটিজম একটি মানসিক বিকাশজনিত সমস্যা। তাই অভিভাবকদের অটিস্টিক শিশুকে একজন মনোবিজ্ঞানীর কাছে নিয়ে যাওয়া উচিত। প্রতিটি অটিস্টিক শিশু আলাদা হওয়ায় তাদের আলাদাভাবে যত্ন নিতে হবে। এক্ষেত্রে তাদের জন্য মাল্টিডিসিপ্লিনারি টিম অথবা ট্রান্সডিসিপ্লিনারি টিম গঠন করতে হবে।  এছাড়াও সাইকোথেরাপি বা স্পেশাল শিক্ষাদানের মাধ্যমে এসব শিশুকে ৮০-৯০ ভাগ পর্যন্ত সুস্থ করে তোলা সম্ভব। সঠিক যত্ন ও চিকিৎসা নিলে এরা সমাজে স্বাভাবিকভাবে চলার উপযোগী  হয়ে উঠে।

অটিজম শিশুদের শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কিছু শিক্ষাপদ্ধতি ভালো ফল দেয়। অটিজম শিশুদের যদি জটিল বিষয়কে সহজ-সরলভাবে ধাপে ধাপে উপস্থাপন করে শেখানো যায়, তবে তারা সহজে বুঝতে পারবে। শ্রেণিকক্ষ ব্যবস্থাপনা পদ্ধতির মাধ্যমে অটিজম শিশুদের শিক্ষাদান করা যেতে পারে। যোগাযোগ দক্ষতা বাড়ানোর মাধ্যমে অটিজম শিশুদের বিভিন্ন বিষয় শেখানো সম্ভব।

সামাজিক দক্ষতা অর্জন পদ্ধতির মাধ্যমেও অটিজম শিশুদের সামাজিক আচরণ শেখানো সম্ভব। শতকরা ৭০ ভাগ অটিস্টিক শিশুর আইকিউ ৭০-এর নিচে থাকে; তবে অনেক অটিস্টিক শিশু প্রচণ্ড মেধাবী হয়। এমনকি এদের আইকিউ ১২০-এর অনেক উপরে থাকে। আবার দেখা যায় বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে অটিস্টিক শিশুরা অন্যদের চেয়ে অনেক বেশি দক্ষ ও পারদর্শী হয়ে থাকে।

প্রাতিষ্ঠানিকভাবে শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে তাদের জন্য প্রয়োজন হয় বিশেষায়িত স্কুল, যেখানে থাকে একটি মাল্টিডিসিপ্লিনারি টিম। তারা একজন অটিস্টিক শিশুর চাহিদা অনুযায়ী তার শিক্ষাক্রম তৈরি করে।


অটিজম শিশুদের শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কিছু শিক্ষাপদ্ধতি ভালো ফল দেয়। অটিজম শিশুদের যদি জটিল বিষয়কে সহজ-সরলভাবে ধাপে ধাপে উপস্থাপন করে শেখানো যায়, তবে তারা সহজে বুঝতে পারবে। শ্রেণিকক্ষ ব্যবস্থাপনা পদ্ধতির মাধ্যমে অটিজম শিশুদের শিক্ষাদান করা যেতে পারে। যোগাযোগ দক্ষতা বাড়ানোর মাধ্যমে অটিজম শিশুদের বিভিন্ন বিষয় শেখানো সম্ভব।


এই টিমে বিভিন্ন ক্ষেত্রে পারদর্শিদের রাখা হয় যারা অটিস্টিক শিশুর আচরণ পর্যবেক্ষণ করে। এরপর তার চাহিদাগুলো বের করার মাধ্যমে উন্নয়নের চেষ্টা করে। এছাড়াও বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে তাদের শিক্ষা দেওয়া হয়ে থাকে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে একই শ্রেণিকক্ষে শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে একীভূত শিক্ষা মেনে শিক্ষা দেওয়া হয়। এসব স্কুলে তাদের অন্যান্য অনেক সেবা দেওয়া হয়।

যেমন, প্রাক-শৈশবকালীন বিকাশমূলক কার্যক্রম, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষণ, বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ, অবসর বিনোদন প্রশিক্ষণ, থেরাপিভিত্তিক সেবা, অকুপেশনাল ও ফিজিওথেরাপি, সেনসরি ইনটিগ্রেশন ও ভাষাগত দক্ষতা উন্নয়ন থেরাপি ইত্যাদি।

কোনো কোনো বিদ্যালয়ে প্রতিবন্ধিতা শনাক্তের পর নিবিড় পর্যবেক্ষণের লক্ষ্যে ‘মা ও শিশু কার্যক্রম’-এর আওতায় সেখানে ২ থেকে ৪ বছর বয়সী শিক্ষার্থীর জন্য শিশু, মা ও পরিবারের সদস্যদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ হিসেবে সেলাই, মাটির কাজ, হস্তশিল্প, কম্পিউটার, পুতুল তৈরি, তাঁতের শাড়ি বুনন, অফিস সহকারী, রান্না ও ক্যান্টিনকে কাজে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। বিনোদনমূলক প্রশিক্ষণ হিসেবে এসব স্কুলে শেখানো হয় নাচ, গান, সাঁতার ও রান্নার কাজ।

বর্তমানে অটিস্টিক শিশুদের উন্নয়নের জন্য সরকারিভাবে অনেক পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। অটিস্টিক শিশুদের জন্য বিশেষায়িত বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। সরকারি ছাড়াও বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বা সংস্থাও তাদের জন্য কাজ করে যাচ্ছে।

এছাড়া তাদের উন্নয়নের লক্ষ্যে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। প্রতিষ্ঠা করেছে বেশ কিছু বিদ্যালয়। এসব বিদ্যালয়গুলোর মধ্যে রয়েছে সুইড বাংলাদেশ পরিচালিত ৪৮টি বুদ্ধি প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী ফাউন্ডেশন পরিচালিত সাতটি ইনক্লুসিভ বিদ্যালয়। এছাড়া বেসরকারি পর্যায়ে বেশ কিছু বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের বিদ্যালয় রয়েছে।

তবে তাদের জন্য আরোও উপযোগী পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। তাদের জন্য উপযোগী আরও উন্নতমানের আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত শিক্ষাক্রম চালু করা প্রয়োজন। একীভূত শিক্ষার মাধ্যমে নন-অ্যাকাডেমিক ও অ্যাকাডেমিক শিক্ষার উন্নয়নে সচেষ্ট থাকা প্রয়োজন।

থেরাপিস্ট, বিশেষ শিক্ষকদের উন্নতমানের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। অ্যাকাডেমিক অংশকে কলেজ পর্যন্ত উন্নত করতে হবে। সমসামায়িক ডিভাইসগুলোকে প্রতিনিয়ত শিক্ষার কাজে উপযোগী করে তৈরি করতে হবে। আবাসিক সুযোগ-সুবিধা প্রদান করতে হবে। বিশেষ শিক্ষার ওপর গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন প্রশিক্ষণ চালু করতে হবে। এসব বিষয় নিশ্চিত করতে পারলে একসময় দেশের সম্পদে পরিণত হয়ে উঠবে।

কোন মন্তব্য নেই

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Exit mobile version