বাড়ি শিখন-শিক্ষণ প্রক্রিয়া আমার ভিক্টোরিয়া কলেজ ও বর্তমান শিক্ষার হালচাল

আমার ভিক্টোরিয়া কলেজ ও বর্তমান শিক্ষার হালচাল

বাংলাদেশের শিক্ষা
বাংলাদেশের শিক্ষা

মুনতাসির বিন মোস্তফা লিখেছেন কুমিল্লার ভিক্টোরিয়া কলেজ নিয়ে

আমি কুমিল্লার বিখ্যাত ভিক্টোরিয়া কলেজের শিক্ষার্থী। যাই হোক, সর্বপ্রথম আমি আমার শিক্ষা-পরিচিতি দিয়ে নেই। আমি বর্তমানে এই কলেজের বিবিএস(পাস) ১ম বর্ষের ছাত্র এবং সেই সাথে অন্যত্র কাত (Certified Accounting Technician) পড়ছি। যেটি বাংলাদেশে ব্রিটিশ কাউন্সিল দ্বারা পরিচালিত চার্টার্ড অ্যাকাউন্টিং কোর্স। আমি যখন নবম শ্রেণীতে পড়ি তখন থেকেই এই প্রফেশনাল কোর্স নিয়ে পড়ার জন্য নিজেকে তৈরি করে নিই। অন্যদের মত আমার বাবাও চাননি আমি এই কোর্সে পড়ি। অনেক অনুরোধের পর তিনি একটি শর্ত জুড়ে দিয়েছেন, আর তা হল আমাকে সরকারি ইউনিভার্সিটিতেও পড়তে হবে।

যেহেতু আমার টার্গেট শুধু CAT এবং ACCA করার তাই ইচ্ছে করেই আর কোনো ভার্সিটিতে পরীক্ষা দিলাম না। কিন্তু বিবিএসে পড়তে তো আর পরীক্ষা লাগে না, তাই অনেকটা বাধ্য হয়েই ভর্তি হতে হলো এই ভিক্টোরিয়া কলেজে। যথারীতি ক্লাস শুরু হলো দুই জায়গাতেই। আমিও ব্যস্ত হয়ে গেলাম পড়ালেখা নিয়ে। কিন্তু বিপত্তি বাধলো তখনই যখন CAT এর পড়ার সাথে বিবিএসের পড়ার কোনো মিল দেখছিলাম না। এখানে এসেই আমার চোখ খুলে গেলো! আমি অনুধাবন করলাম এতোদিন আমরা (এইচএসসি পর্যন্ত) কী শিখেছি? CAT-তে শুধু তাই শেখানো হয় যা আমাদের ভবিষ্যতের কর্মজীবনে প্রয়োজন। আর আমরা অন্যান্য গতানুগতিক ধারায় শিখে আসি ইহার সংজ্ঞা, উহার প্রয়োজীনয়তা, এনার সঙ্গে তেনার পার্থক্য, অমুক বিষয় সম্পর্কে কোন বিজ্ঞজন কী বলেছেন ইত্যাদি।

আমি অ্যাকাউন্টিং-এর ছাত্র, তাই শুধু আমার অভিজ্ঞতা থেকেই বলছি, আমরা নবম শ্রেণীতে যে পদ্ধতিতে হিসাব রক্ষণ শিখেছি, দশম শ্রেণীতে এসে শুনি আগের পদ্ধতি ভুল এবার নতুন পদ্ধতি গেলানো শুরু। এভাবে কলেজ পর্যায়ে এসে দেখি আগের সব পদ্ধতিই নাকি সনাতন! এবার আবার নতুন পদ্ধতির আগমন! শিক্ষার্থীরাও নাম্বার পাবার জন্য আর উচ্চবাচ্য না করে গিলতে থাকে। প্রয়োগিক জ্ঞান আর তাত্ত্বিক জ্ঞান এর মাঝে আমি পার্থক্য করতে পারতাম না যদি না আমি CAT-তে না পড়তাম। শুধু ব্রিটিশদের সিস্টেমেই না. বিশ্বের অন্যান্য সকল জায়গায় সরাসরি প্রয়োগিক জ্ঞান দিয়ে থাকে যাতে একজন শিক্ষার্থী খুব কম সময়ে একজন প্রফেশনাল হিসেবে কর্মক্ষেত্রে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে। এই যদি হয় অবস্থা তাহলে আমাদের এখনই বিষয়টি নিয়ে ভাবার সময় এসে গেছে।

আর কত শিক্ষার্থী মুখস্ত শিক্ষার বলি হতে যাবে? শুধু সার্টিফিকেটই কি সবকিছু? সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্টিফিকেটের জন্য অন্যায় বলি হতে যাবো কেন? প্রফেশনালদের জন্য যা শেখা জরুরি তা স্কুল থেকেই কেন একটু একটু করে শেখানো যায় না? কোন বিষয়ের সংজ্ঞা, গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অথবা কোনো মনিষীর বানী শিখে পরীক্ষায় পাশ করা যায় বটে কিন্তু উন্নতি করা যায় না। এখন হয়তো অনেকে বলবেন, “এসব শিখেই তো অনেকে ভালো চাকুরি করছে”। তাতো করছেই, এই যেমন ফিজিক্স থেকে মাস্টার্স করে ব্যাঙ্কের টাকা গুনছেন। আবার যারা বংলাতে অনার্স করেন, তারাও ব্যাঙ্কে চাকরি করছেন।

এ পরিবর্তনের জন্য আমাদের গুরুজনদের আগে বোঝাতে হবে। আমি এই লেখার মাধ্যমে তাঁদের শুধু এটাই বলতে চাই, সময় এখন অনেক পরিবর্তিত হয়েছে। ভবিষ্যত পৃথিবী এখন শুধু দক্ষদেরই দেখতে চায়, কোনো মূর্খ ডিগ্রিধারীদের নয়। তবে আমি কোনো ডিগ্রির বিপক্ষেও যাচ্ছিনা। প্রয়োজন শিক্ষানীতি বদলের। যখন শিক্ষাবিদ ও লেখক মুহম্মদ জাফর ইকবাল মুখস্ত শিক্ষনীতি পরিবর্তনের ওপর জোর দিয়েছিলেন তখন আমরা কিছুটা শঙ্কিত ছিলাম। কারণ তখন আমরা ভাবতাম মুখস্ত করে পার পেলেই হয়। কিন্তু এখন আমি ভবিষ্যত নিয়েও শঙ্কিত কারণ এভাবে চলতে থাকলে হয়তো ভুরি ভুরি A+ আসবে কিন্তু মেধার সঠিক বিকাশ ঘটবে না।

লেখক: শিক্ষার্থী, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ, কুমিল্লা।

কোন মন্তব্য নেই

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Exit mobile version